অপুদাকে আজকে খুব খুশি লাগছে। রুমে প্রবেশ করেই আমাকে কফি বানাতে বলল। আমি বললাম, ” কি ব্যাপার, এত খুশি যে। কোনো মেয়ের প্রেমে পড়লে নাকি?” অপুদা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো। আমি জানি অপুদার মতো বাউণ্ডুলে ছেলে প্রেমে পড়ার লোক নয়। যে কিনা সারাদিন শার্লক হোমস আর সব গোয়েন্দা কাহিনীর বই নিয়ে থাকে, সে পড়বে প্রেমে!
“যা আগে কফি বানিয়ে নিয়ে আয়। একটা সারপ্রাইজ আছে।”
অপুদা যখন সারপ্রাইজ দিবে তবে সেটা ছোট কিছু না। আমি আর দেরি না করে কিচেন রুমে প্রবেশ করলাম।
এবার আমাদের পরিচয়টা দেয় আমি অনিক দেওয়ান লেখাপড়া শেষ করে বেকার ঘুরছি। আর আমাকে যে কফি বানাতে বললো, সে হলো আমার অপুদা। নাম আজাদ অপু। আমার থেকে বয়স, সৌন্দর্য,শক্তি আর বুদ্ধি সব দিক থেকেই এগিয়ে। অপুদার বাবা-মা কেউ নেই। রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে।রেখে যাওয়ার মধ্যে বড় বোন, অঢেল অর্থ আর গুলশানের এই ডুপ্লেক্স বাড়ীটা রেখে গেছে। অপুদার বড় বোন সায়মা আপা স্বামীকে নিয়ে নিউইয়র্কে চাকরি করেন।অপুদাকে অনেকবার বলেছেন চলে আসতে। কিন্তু অপুদার এককথা আমি আমার দেশ আর বাবা মার স্মৃতি ছেড়ে কোথাও যাবো না।
আমার কফি বানানো শেষ। আমি কফির কাপ অপুদার দিকে এগিয়ে দিলাম। অপুদা কফিতে ছোট্ট করে চুমুক দিয়ে টেবিলে রাখলো। তারপর তার প্যান্টের পকেট থেকে একটা রিভলভার বের করে টেবিলে রাখলো।
আমি রিভলভার দেখে একদম আকাশ থেকে পড়লাম। এরপর আরও অবাক হলাম যখন অপুদা তার পকেট থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। আমি কার্ডটা হাতে নিয়ে পড়ে দেখলাম “প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর আজাদ অপু খান”।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, “গোয়েন্দা!”
:হ্যা গোয়েন্দা। আর তুই আমার সহকারী।
:কেন? আমি কেন?
:তুই কম বেশি বই পড়িস, আর আমার সব কেসের নথি তোকে রাখতে হবে।
:তা অবশ্য যা বলেছো!আমি কি তাহলে তোপসে হয়ে গেলাম আর তুমি ফেলুদা?
:তা তুই আমাকে ফেলুদা, ব্যোমকেশ কিংবা শার্লক হোমস যা মনে করতে পারিস। জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়ে দিয়েছি। আর ঠিকানা এবং কন্টাক্ট নম্বর বাড়ীরটা দিয়েছি। ওটা তোকেই হ্যান্ডোল করতে হবে।
: তা না হয় বুজলাম, কিন্তু তোমার ব্যক্তিগত নম্বর কেন দিলে না?
:গুড, এই তো গোয়েন্দা সহকারীর মতো প্রশ্ন। আমার নম্বর দিলে তদন্ত করার সময় ব্যাঘাত ঘটতে পারে আবার অনেকে ফোন করে বিরক্তও করতে পারে। আর মেইলের ঠিকানাটা তোরটা দিয়েছি।
:ওহ। তা তোমার এই রিভলভার?
:এটা বৈধ, শূটিং এ আমার হাত খুব একটা খারাপ না। ব্যাক্তিগত নিরাপত্তার জন্য সাথে রাখবো। এটা কোল্ট. ৪৫। ফুল লোডেড। এরপর হ্যান্ড গান ওয়েলথারের পিপিকে বা পিপি এইট আনবো,৬.৭৫/৭.৬৫ মিলিমিটার এর। লাইসেন্স পেতে খুব একটা অসুবিধে হয় নি।
: মাসুদ রানা বা জেমস বন্ড সিরিজে পড়েছি ওরা ওয়েলথারের হ্যান্ড গান ইউস করে।যদিও এগুলো গল্প, তারপরও বাস্তব মনে হয়।
:সহকারী হিসেবে তুই মন্দ না। তোর থ্রিলার প্রেমের কারণেই তোকে এই দায়িত্ব দিলাম।আর হ্যা, এখন গোয়েন্দাগিরি করতে গেলে কেউ খুব একটা পাত্তা দেয় না। বিশেষ করে পুলিশও ঝামেলা করে। তাই মামাকে বলে রেখেছি।
অপুদার বড় মামা সৈয়দ আনোয়ার চৌধুরী সিলেট বিভাগীয় পুলিশের সহকারী কমিশনার। একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার। খুবই অমায়িক ও নিরহংকারী একজন লোক।
বাবা- মা মরা ভাগ্নেটাকে খবই স্নেহ করে।
********
অপুদার গোয়েন্দাগিরি করার সহকারী হওয়ার দুই দিন পর রাতে বাড়ীর টেলিফোনে কেস সম্পর্কিত কল এলো।
অপুদা তখন চোখ বন্ধ করে ডেকসেটে আজম খানের,
“হারিয়ে গেছে খুঁজে পাবো না।
এতো দিনের আশা হল নিরাশা।
যদি জানিতাম তবে আর মিছে মরিতাম না।।
ভালোবাসা, শুধু মিছে আশা।
এ জীবনে তারে আর ফিরে পাব না।।”
গান শুনছিল। অপুদা বাংলার পপ সম্রাট আজম খানের খুবই ভক্ত। গান শুনছিল আর ধূম্রশলায় সুখ টান দিচ্ছিল। এই সময়টা অপুদাকে ডাক দেওয়া কিংবা বিরক্ত করা বারণ। ধূমপানের সময় বিরক্ত করা কেন বারণ? আমার মতো অধূমপায়ীর তা বুজে আসে না।আমি কল রিসিভ করলাম। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বয়স্ক কন্ঠের এক ভদ্রলোক বলে ওঠলো, “আজাদ অপু খান আছে?”
আমি বললাম, “আমি অপুদার সহকারী। কি প্রয়োজন? আমাকে বলতে পারেন।”
অন্যসময় হলে ছোট ভাই বলে পরিচয় দিতাম, এখন যেহেতু গোয়েন্দাগিরিতে নেমেছি তাই সহকারী হিসেবেই পরিচয় দিলাম।
“একটা তদন্তের জন্য খুবই প্রয়োজন।উনার সাথে কথা বলতে পারলে ভালো হতো।”
আমি বুজলাম ভদ্রলোক অপুদার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। আমি আস্তে করে অপুদাকে ডাক দিয়ে বললেম, ” অপুদা, একজন ভদ্রলোক ইনভেস্টিগেশনের জন্য তোমার সাখে কথা বলতে চাই।”
অপুদা ইনভেস্টিগেশন এর কথা শুনে পুরাতন অভ্যেস বাদ দিয়ে সিগারেটটা ট্রেতে রেখ ওঠে এলো। আমার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো।
ওপাশের কথা যাতে আমি শুনতে পাই তাই লাউডস্পিকার অন করেই অপুদা বললো, “হ্যালো, আজাদ অপু খান বলছি।
কে বলছেন?”
“আমি রাজশাহী থেকে মির্জা আশরাফ চৌধুরী বলছি। আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হবে।যত টাকা লাগে আমি দিবো।”
“দেখুন, টাকাটা বড় নয়, আপনি আপনার সমস্যাটা বলুন।”
“দুঃখিত , আসলে আমার বাড়ীতে কিছুদিন আগে একটা দূর্ঘোটনায় আমার ভাইয়ের ছেলের মৃত্যু হয়েছে।আর সেই শোকের মধ্যেই গত পরশুদিন আমার বাড়ীতে চুরি হয়েছে। একটা স্বর্ণের ঘোড়ার মূর্তি। অনেক পুরাতন আর নবাবি আমলের তৈরি। চুরিটা পুলিশকে ইনফর্ম করতে পারি নাই কারণ, চোর চুরি করে যাওয়ার করে যাওয়ার সময় একটা চিঠি রেখে গেছে। যদি পুলিশকে খবর দেয় তবে আমার পরিবারের ক্ষতি করবে। পরিবার বলতে আমার একমাত্র ছেলেই এখন আছে। আপনি আসলে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে কেসটা কি আপনি নিচ্ছেন?”
“অবশ্যই, কেসটা আমি নিচ্ছি।”
” কবে আসছেন?”
“আগামীকাল, আপনি আপনারা বাড়ীর ঠিকানাটা বলুন?”
অনিক ঠিকানটা নোট করে নি।
“ঝালুকা চৌধুরী বাড়ী, দূর্গাপুর, রাজশাহী।”
আমি ঠিকানাটা নোট করে করে অপুদার দিকে তাকালাম। অপুদা একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা রেখে দিল।
আমি বললাম, “তাহলে কখন রাজশাহী রওনা হচ্ছি?”
“ভোরে, প্রস্তুতি নিয়ে রাখ।”এই বলে অপুদা তার রুমে চলে গেল।
চলবে…….
(প্রথমবার গোয়েন্দা গল্প লিখলাম। ফেলুদার গল্প পড়ে। শার্লক হোমসের ওয়াটসন, ফেলুদার তপসে কিংবা ব্যোমকেশের অজিতের মতো এই গল্পে আমি নিজেই অপুদার সহকারী হলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি)
Good
Nice
Wow 😳
nice
Nice
Vlo
Nice
Nice
Nice
ধন্যবাদ
Nice
Nice